পর্দা কি শুধু নারীদের জন্য?

প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০২৫; সময়: ১০:৪২ পূর্বাহ্ণ |
খবর > ধর্ম

ধর্ম ডেস্ক :  যেখানেই ওয়ায-নছীহত শুনি, আর যতই ইসলামী পত্র-পত্রিকা পাঠ করি না কেন পর্দা সম্পর্কে চারিদিকে একই বক্তব্য যে, নারী জাতির পর্দা উচ্ছন্নে গেল।

অবশ্য দেশের বর্তমান অবস্থাও তাই। তবে এ অবস্থার জন্য দায়ী কে? শুধু কি এককভাবে নারী? নাকি পুরুষগণও? আল্লাহপাক পুরুষ জাতিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্ব করবে’ (নিসা ৩৪)।

কিন্তু বর্তমান সমাজের পুরুষগণ কি আল্লাহর উক্ত নির্দেশের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হয়েছেন? যদি পুরুষগণ সচেতন হ’তেন তবে কি জাতির এতটা অধঃপতন হ’ত? এ প্রসঙ্গে আমরা বলব, মুসলিম সমাজের পুরুষদেরই পর্দা নেই।

এতক্ষণে হয়ত অনেক পাঠক প্রশ্ন করে বসেছেন, এটা আবার কেমন কথা? পুরুষের আবার পর্দা কিসের? নারীদের মত পুরুষদেরও বোরকা পরতে হবে নাকি? পুরুষের বোরকা পরিধানের প্রয়োজনীয়তা নেই সত্য, তবে চোখের পর্দা থেকে রেহাই পাওয়ারও কোন উপায় নেই।

যারা ঈমানদার পুরুষ তাদের জন্য আল্লাহপাকের নির্দেশ শুনুন ‘হে নবী! আপনি মুমিন পুরুষদেরকে বলে দিন তারা যেন নিজেদের দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে’ (নূর ৩০)।

জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ছাহাবী রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জামাতা ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রাঃ)-এর প্রতি রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ ছিল- ‘হে আলী।

একবার দেখার পর পুনরায় তাকাবে না। কারণ, প্রথমবারের দেখা তোমার জন্যে ক্ষমা হয়ে যাবে, কিন্তু দ্বিতীয়বার দেখলে তোমার জন্য ক্ষমা হবে না’। ১ উপরোক্ত আয়াত ও হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, পর্দা পুরুষদের জন্যও ফরয।

তবে নারীদের মত চোখ-মুখ ও সমস্ত শরীর আবৃত করে নয়। অপরদিকে নারীদের পর্দার ব্যবস্থা পুরুষরাই করবে। যে সমাজে পুরুষের পর্দা ঠিক আছে সে সমাজে নারীদের অধঃপতন হ’তে পারে না। এ জন্য আমি পেটের রোগে চোখের চিকিৎসা করতে চাই।

যেমন কোন এক অভিজ্ঞ ডাক্তারের নিকট পেটের অসুখের জন্য এসে জনৈক ব্যক্তি বলল, ডাক্তার ছাহেব আমার এই ছেলেটা দীর্ঘদিন যাবৎ পেটের রোগে ভুগছে। কিন্তু কিছুতেই ভাল হচ্ছে না। ডাক্তার ছাহেব রোগীকে ভাল করে দেখেশুনে বললেন, আপনার ছেলের চোখের চিকিৎসা করলেই পেটের রোগ

ভাল হয়ে যাবে। রোগীর অভিভাবক তখন রেগে বললেন, আপনি কেমন ডাক্তার হে? রোগ হয়েছে পেটে আর চিকিৎসা করতে বলছেন চোখের? এবার ডাক্তার ছাহেব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বললেন, আপনার আদরের সন্তান যখন যা কিছু খেতে চায় তাই খেতে দেন, তাই না? জওয়াবে অভিভাবক বললেন, হ্যাঁ। কি আর করব বলুন।

একটাই ছেলে তো তাই? ডাক্তার ছাহেব মিষ্টি হেসে বললেন, আমি এজন্যই চোখের চিকিৎসা আগে করতে বলেছি। কারণ, চোখের রোগ ভাল হ’লে পেট আপনাআপনি ভাল হয়ে যাবে।

সম্মানিত পাঠক! ভেবে দেখুন। আল্লাহর বাণী ‘পুরুষগণ নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল’ -এর কতটুকু বাস্তব প্রয়োগ আমাদের মাধ্যমে হয়েছে? আমরা কি নারীদের ইসলামী ছাঁচে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছি।

নাকি গভীর রজনীতে পুরুষদের সাথে সম্মিলিত ভাবে রাজপথে ‘মিলেনিয়াম’ উদযাপনে উৎসাহ দিয়েছি। দুর্ভাগ্য, রাজপথ আজ মেয়েদের দখলে।

মিছিলের অগ্রভাগে নারী। সন্ত্রাসী কার্যক্রমেও নারী। তবে পুরুষদের কর্তৃত্ব কোথায় থাকল? সঙ্গত কারণেই বলা, পেটের অসুখে চোখের চিকিৎসা করতে হবে।

আমরা যারা ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ এবং যারা বুঝেও না বুঝার ভান করি, তারা কিন্তু নারীদেরকে দোষারোপ করে বলি, ‘দাইয়ুস’। আসলে প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। ‘দাইয়ুস’ শব্দটা রাসূল (ছাঃ) পুংলিঙ্গে ব্যবহার করেছেন।

সত্যিকার অর্থে দাইয়ূস ঐসব পুরুষ, যারা তাদের অধীনস্থ নারীদের পর্দায় রাখে না। এসম্পর্কে ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন প্রকার লোকের জন্য জান্নাত হারাম, তাদের মধ্যে এক প্রকার লোক হচ্ছে, যারা তাদের পরিবার পরিজনদের মাঝে অপবিত্রতা স্থাপন করে’ (অর্থাৎ পর্দার ব্যবস্থা করে না)।

অতএব পুরুষ ভাইগণ আসুন! সময় থাকতে নিজে এবং নিজের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি।

অনেক পাঠক আছেন, যারা আমাকে নারী পক্ষপাতি ধারণা করতে পারেন। যেহেতু আমি পুরুষ, তাই পুরুষের পক্ষে সাফাই গাওয়া উচিৎ ছিল। তবে শুনুন।

বিশ্ববিখ্যাত ইমাম ইমাম বুখারী (রহঃ) কি বলেন? তিনি বলেছেন, ‘চোখের খিয়ানত হ’ল এমন জিনিষের দিকে তাকানো যে দিকে তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে’।

ইমাম যুহরী বলেছেন, ‘ঋতুবতী হয়নি এমন নাবালিকা মেয়েদের দিকে তাকানো ঠিক নয়, যাদের দেখলে শুধু দেখারই লালসা হয়। চাই ওরা অপ্রাপ্তা বয়ষ্কা হৌক’।

উপরের বর্ণনাগুলো প্রমাণ করে যে, পর্দা শুধু নারীদের জন্য নয়। পুরুষদের জন্যও। যেসব বাড়ীতে মহিলাদের পর্দার ব্যবস্থা আছে, সেসব বাড়ীতে পুরুষদের পর্দা না থাকলে মহিলাদের পর্দা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

আল্লাহ বলেন, ‘যখন তোমরা ঘরসমূহে প্রবেশ করবে, তখন নিজেদের লোকজনকে সালাম করবে। কারণ, কল্যাণের দো’আ আল্লাহর নিকট থেকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে’ (নূর ৬১)।

এখানে যদিও শুধু সালামের কথা বলা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে বাড়ির দরজায় সালাম করার অর্থই হচ্ছে গৃহে যেসব পর্দানশীন নারীরা থাকবে তারা বাহিরে আগত ব্যক্তির সালাম শুনে দ্রুত পর্দা করবে।

যদি সে ‘গায়রে মুহরেম’ হয়। তাছাড়া একই বাড়িতে স্ত্রী-কন্যা, মা-খালা, দাদী-নানী, ভাতিজি-ভগ্নি প্রমুখ থাকতে পারে, তাই বলে কি পর্দা করতে হবে না? সালাম না দিয়ে যদি হুট্ করে বাড়ীতে প্রবেশ করা হয় তাহ’লে পর্দানশীন মহিলা কি করে পর্দা ঠিক রাখবে?

এছাড়া নিজের গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে প্রবেশকালে সালাম ও অনুমতি ছাড়া প্রবেশের কোন সুযোগ ইসলামে নেই।

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্যদের ঘরে প্রবেশ করনা যতক্ষণ না ঘরের লোকদের অনুমতি পাবে এবং তাদের প্রতি সালাম পাঠাবে। এ নিয়ম তোমাদের জন্য কল্যাণকর’ (নূর ২৭)।

সম্মানিত পাঠক! একবার মুসলিম সমাজের দিকে তাকিয়ে দেখুন? আমরা ক’জন উক্ত আয়াতের নির্দেশ পালন করে চলছি? আমরা কি পৃথিবীতে পশু পাখি হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছি যে, আমাদের কোন বিধি বিধান নেই? তাহ’লে কি করে আমাদের পর্দা রক্ষা হবে? সারাজীবন শুধু নারীদের পর্দার কথা বলে গেলাম আর শাসন করলাম কিন্তু নারীর আগে যে পুরুষদের পর্দার প্রয়োজন আছে তা কি কখনো চিন্তা করেছি?

হায়রে মুসলিম সমাজ! ‘ধান ভাংতে শীবের গীত গায়’। আর কথায় কথায় বলি, পর্দা গেল। নারীরা সমাজটাকে উচ্ছন্নে দিল। যত দোষ ঐ নন্দ ঘোষ।

নারীরাই যদি সব নষ্ট করল, তাহ’লে পুরুষদের বেঁচে থেকে লাভ কি? এদেশের মেয়েরা যারা পর্দা হারাল তারা কারা? তারাতো আপনার আমার সকলেরই মা, বোন, ভাগ্নি।

এক্ষণে চিন্তা করুন ‘দাইয়ুস’ কারা? আর জাহান্নাম কাদের জন্য বরাদ্দ হবে? টেলিভিশন চলচ্চিত্র কি মুসলমানদের ঘরে ঘরে নেই? সেখানে কি নারী পুরুষের পর্দার আইন লংঘন হচ্ছে না? এজন্য দায়ী কারা? আমি বলব, পুরুষরাই দায়ী।

এ দেশে এমন কিছু ইসলামী দল আছে, যাদের কেউ ‘সুবহা-ন্নাল্লা-হ’ আর ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’ পাঠ করে লক্ষ কোটি ছওয়াব অর্জন করে জান্নাতে যেতে চায়।

কিন্তু পর্দার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফরয লংঘন করতে তাদের বাধে না। আবার কিছু লোক আছে যারা মুখে বলে, ‘ইসলামের আলো ঘরে ঘরে জ্বালো’ কিন্তু তাদের নিজেদের ও নিজেদের পরিবারের মাঝে আলোর চিহ্নটি পর্যন্ত খাঁজে পাওয়া যায় না। তারা কি করে ইসলামী হ’তে পারে? আবার আর এক হুযুর আছেন, যারা অন্যকে জান্ন। গহক 48/121 বল চয়তা দিয়ে পর্দার ভিতরে ঢুকে নারীদের সেবা পাওয়ার আশা করে থাকেন।

জানিনা তখন তাদের চোখের পর্দা ও মনের পর্দা কোথায় লুকায়। এমনি অসংখ্য দল ইসলামের ডালি সাজিয়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের প্রকৃত পর্দা প্রথা পদদলিত করে মানুষকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে পর্দা করার তওফীক দিন। আমীন!!

[TheChamp-FB-Comments style="background-color:#f0f0f0"]
উপরে