স্টারলিংককে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক লাইসেন্স প্রদান

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৫; সময়: ৬:৪৩ অপরাহ্ণ |

বাংলাদেশে উচ্চগতির স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবায় নতুন যুগের সূচনা হলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য লাইসেন্স পেয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল স্টারলিংকের লাইসেন্স অনুমোদন করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গত ২৫ মার্চ ‘নন-জিওস্টেশনারি সার্ভিস অরবিট স্যাটেলাইট সার্ভিসেস অপারেটর ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক নীতিমালা প্রকাশ করে। সেই নীতিমালার আওতায় স্টারলিংক নির্ধারিত ফি ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র জমা দিয়ে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে। বিটিআরসির ২৯৪তম কমিশন সভায় গত ২১ এপ্রিল নীতিগতভাবে স্টারলিংককে লাইসেন্স প্রদান সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেন প্রধান উপদেষ্টা।

বিশ্বজুড়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা বিস্তারের লক্ষ্যে স্টারলিংক স্যাটেলাইটভিত্তিক সংযোগ দিয়ে আসছে। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে স্টারলিংক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে জনগণের চাহিদার প্রতি সম্মান জানিয়ে স্টারলিংককে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধের প্রতিবাদে জনমতের প্রতিফলন হিসেবেই এই উদ্যোগের বাস্তবায়ন ঘটেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তার মতে, স্টারলিংকের আগমন বাংলাদেশের মোবাইল এবং ব্রডব্যান্ড বাজারে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করবে। বর্তমানে যেখানে ভয়েস কল ও ডেটা বান্ডেলকেন্দ্রিক সেবা চলছে, সেখানে স্টারলিংক নতুন ধরনের ডিজিটাল সেবা ও উচ্চগতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহ করবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্টারলিংক ইন্টারনেটের মাধ্যমে শহর ও গ্রামের মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্য কমবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও ব্যবসা খাতে উচ্চগতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও প্রসারিত হবে।

এছাড়া, দুর্যোগকালীন সময়েও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের ক্ষেত্রে স্টারলিংক বড় ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্টারলিংক সেবার মূল্য নির্ধারণ এবং স্থানীয় প্রযুক্তির সঙ্গে সমন্বয় একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। দেশের বিদ্যমান অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে মানসম্মত সেবা এবং ব্যয়সীমা গ্রহণযোগ্য রাখতে হবে।

সব মিলিয়ে, স্টারলিংকের বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিক প্রবেশ দেশের ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই সেবা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারের চিত্র আমূল বদলে দিতে পারে — এমনটাই প্রত্যাশা করছেন প্রযুক্তিবিদরা।

[TheChamp-FB-Comments style="background-color:#f0f0f0"]
উপরে